মনুষ্যত্ব
------------দ্বারক ঘোষ
পৃথ্বিস ঘোষের ওয়াল থেকে |
ঐ তো ওদের পাড়ি ----পায়ে পায়ে ।
ওরা শুধু গাঁয়ের ঠিকানাটুকু জানে ----
পথের ঠিকানা জানে না ।
মাইল----দুশো তিনশো চারশো
বা তার চেয়েও বেশি !
তবুও ওরা হাঁটে ---- পায়ে পায়ে !
চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে
বাপের ভিটেখানি---
কি ভীষণ টান !অপার আকুতি ------
আপন মাটির হাতছানির ।
গাঁয়ের মাটির ঐ ধুলিতেই যে মিশে আছে
ওদের সব স্বপ্ন ----সব ভালো লাগা ।
ছোটবেলার আদুড় গায়ের সাথি ----
যার সঙ্গে ভাগ করেছে
চৈত্রের বুলান, ঈদের আমন্ত্রণ
হেমন্তের ঘ্রাণ ,বর্ষার গান ;
কাঁথাহীন হিমের রাত----
একসাথে নেওয়া বুকভরা বসন্তের বাতাস !
যে ধূলিতে মিশে থাকে খেলার চিহ্নগুলি----
ধূলির টানে---- সেই ধূলির টানে ওরা হাঁটে
পায়ে পায়ে ।
সূর্যের অগ্নিরোষ মাথার উপরে,
ক্ষুধার উত্তাপ জঠর-গহনে
বাপ হাঁটে ব্যাটা হাঁটে,
মা হাঁটে মেয়ে হাঁটে ,
রাম হাঁটে ,রমজান হাঁটে
সাবিত্রী হাঁটে, শাকিলা হাঁটে
ক্ষুধার্ত শিশুর আশ্রয় স্থল----
ক্লান্তির পায়ে পায়ে হাঁটা পিতার কাঁধ ।
জানি না----আগামীতে ঐ কাঁধ বহনের ক্ষমতা ধরবে কি না !
রোগাক্রান্ত আদরের অন্তজা ঘুমিয়ে আছে----
চলমান পিতৃ ক্রোড়ে !
জানেনা----
কখন চির ঘুম জড়িয়েছে তার চোখ !
'আনন্দ বিহার' থেকে শুরু বেদনা বিহার----
আজ ফিরে ওরা পায়ে পায়ে----
নিষ্ঠুর দমন-পীড়নে ।
পরিযায়ী ওরা----
পাখা মেলে ছিল খাবারের খোঁজে।
যুগে যুগে ওরা নিংড়ে দেয় শরীর নির্যাস--- শ্রম ।
সভ্যতার ভিত গড়ে ওরা----
ওদের ভিত দুর্বল হয় ক্রমশঃ
ওরা বাঁচে---- ওদের বাঁচা মানে উদরপূর্তি ।
ওদের বাঁচা মানে ব্যালট বাক্স পর্যন্ত হাঁটতে পারা ।
ওদের বাঁচা মানে ক্ষয়ে ক্ষয়ে মৃত্যুর দিন গোনা ।
হ্যাঁ ,এমনটাই শেখায় শোষণের রাষ্ট্র ।
ওরা হাঁটে---- পায়ে পায়ে ।
এস ,ওদের হাঁটাটা মিলায় মিছিলে----
প্রতিবাদের মিছিলে ।
এস, ওদের ব্যাথাটার রূপান্তর ঘটায় বিপ্লবের গানে গানে ;
ওদের চোখের জলে সৃষ্টি হোক হাজার সুনামি----
ভেসে যাক শোষণ-বঞ্চনার বধ্যভূমি।
দয়া নয়, করুণা নয়---
আমার দেশ---- আমার সমান অধিকার ।
আমার দেশ---- আমার সত্যি কারের বাঁচার অধিকার।
অধিকারের লড়াইয়ে গড়ে উঠুক নতুন এক পৃথিবী----
নতুন সভ্যতা----
সেই সভ্যতার অতন্দ্রপ্রহরী হোক মনুষ্যত্ব ।