ঈশ্বর

------------ঈশ্বর-------------

                দ্বারক ঘোষ 

ঈশ্বরের বুকে ব্যথা ।
উত্তাল সাগরে ঢেউ আছড়ে পড়ে ।
কাঁচা মাটির মুখগুলিতে ঘোলা চোখের চাহনি----
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় অন্তরে ।
কুল রক্ষার কুলীনদের ঘরে 
অন্তর্জলিযাত্রা পথের যাত্রী----
অসহায় পিতার বেদনা শুকায় মুখে ,
বিসর্জনের প্রতিমা সাজায় মাতা----
                   নবমীর রাত্রি !
শক্তিশেল বিদ্ধ বোবা মায়ের বুকে ।
ফল্গুর অশ্রু বহে যায় 
                    বেদনার দহে ,
সাদা থানের ধ্বজা উড়ে----
               সন্ধির বার্তা বহে !
সতীত্বের স্বীকৃতি বালবৈধব্যের বিমগ্নতায়, 
কুল রক্ষার যুদ্ধে বীরাঙ্গনার বলি----
ক্লেদক্লিষ্ট আঁতুড়ের গলিপথে
ঠিকানা খুঁজে ফুলেদের কলি।
লক লক করে শাস্ত্রসূরিদের নোলা----
মানবতা বন্দি হৃদয়হীন লোকাচারে ,
শাস্ত্রের যূপকাষ্ঠে বলি নারীত্ব ,
সতীর ভবিষ্যত পাক হয় কুলীনদের জঠরে ।

নিরাশার আঁধার ঘেরা মেদিনী----
কুলীনদের কূলে আগুন জ্বলে ,
জলন্ত উল্কাপিণ্ড খসে পড়ে 
       অবিচারের মাটিতে-----
যে মাটি যুগ যুগ ধরে ছিল অপেক্ষারত ।
আহত নাগিনীরা ফণা তুলে----
বিষ ছড়ায় অবিরত ।
খরস্রোতা নদে বহমান অনন্য অজেয় পৌরুষ----
ইস্পাত-দৃঢ় মনন মহা নিনাদ ঘোষে 
কু-আচারে হানে কুঠারাঘাত।
বিষজ্বালা বুকে অসীম অনিন্দ্য অন্তর----
আর্তের বন্দনার নতুন প্রভাত ;
অচলায়তন ভাঙতে পার্থিব চেতনায় পথ হাঁটে 
মেদিনীর 'ঈশ্বর' ।

আঁধারের ছাওয়া পথ আজো
              দু'শো বছর হেঁটে !
স্মরণের মাল্যে ঈশ্বর কি থাকে বেঁচে ?
সার্থক হয় কি স্মরণের বেলা----
যদি মুক্ত-মাণিক না তুলি সাগর সেঁচে ?
কু-আচার ভেঙে আঁধার করতে দূর----
ঈশ্বরের স্বপ্ন পূরণের শপথে 
           যদি না তাঁরে স্মরি ?
সত্যিই কি আমরা হতে পারি----
            ঈশ্বরের উত্তরসূরি ?

Post a Comment

ধন্যবাদ

Previous Post Next Post