করোনা ভ্যাকসিন এবং ভ্যাকসিনেশান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন

করোনা ভ্যাকসিন এবং ভ্যাকসিনেশান সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন

-------------------------------------------------------------------
১৬ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে তড়িঘড়ি করোনা ভ্যাক্সিনেশন শুরু হচ্ছে। কতটা মানব কল্যাণে? কতটাই বা ব্যাবসায়িক ও ভোটের চটকদারি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে! এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম এর পক্ষে ডাক্তার সজল বিশ্বাস
১) করোনা অতিমারি যেভাবে সারা বিশ্বের জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে এবং এখনো করে চলেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা সকলেই এর থেকে পরিত্রানের রাস্তা খুঁজছি।
ভ্যাক্সিন সকলের মনে আশার আলো জাগাবে এটাই স্বাভাবিক। আমরাও চেয়েছি ভ্যাক্সিন গবেষণার সমস্ত ধাপগুলো সঠিকভাবে মেনে দ্রুত ভ্যাক্সিন আসুক। কিন্তু বাস্তবে যে ভ্যাক্সিন গুলো বাজারে এসে গেল তা কি বৈজ্ঞানিক ধাপগুলো মেনে এসেছে? তা কিন্তু প্রশ্ন চিহ্নের মুখেই।

২) কেন ভ্যাক্সিনেশন? করোনা নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকাই বা কতটুকু! কারণ হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে কমপক্ষে ৭০% মানুষকে ভ্যাক্সিনেশন করা দরকার, (যদি ভ্যাক্সিনটির ১০০ % এফিকেসী থাকে।)
কিন্তু কোভিশিল্ডের এফিকেসী মাত্র ৭০ % - এবং যতদুর জানা গেছে ইমিউনিটি বজায় থাকবে মাত্র ৬ মাস পর্যন্ত । অর্থাৎ ভারতবর্ষে প্রায় ১৩০ কোটি মানুষকেই যদি ভ্যাক্সিনেশন করাতে হয় তাহলে প্রথম দুটি ডোজ দেওয়ার পরেও ছমাস বাদে বাদেই ভ্যাক্সিনেশন প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে। সরকার যেখানে দায়িত্ব নিয়েছে মাত্র ৩০ কোটির। কিভাবে প্রতিরোধ হবে তা ভেবে দেখা দরকার।
৩) জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাক্সিন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে গবেষণার সময়সীমা কমানো যেতে পারে। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই সমস্ত ট্রায়ালগুলো সম্পন্ন না করেই উপসংহারে আসা যায় না। কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড এর গবেষণাতেও প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রায়াল ওভারল্যাপিং করা হয়েছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট কি গবেষণা করেছে তার কোনো প্রকাশনাও নেই। যে কোনো ওষুধ বা ভ্যাক্সিন বাজারে ছাড়ার আগে তার গবেষণা পত্রটি অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল জার্নালে প্রকাশ করতে হয়। মানুষ ভ্যাক্সিনটি গ্রহন করার পূর্বেই তাঁর সম্পর্কে জানতে পারবে এটাই নিয়ম ।
৪) এদেশে কোভিশিল্ড এর উৎপাদন হয়েছে অক্টোবর মাসে এবং ভারতের এথিক্যাল কমিটি ছাড়পত্র দিয়েছে জানুয়ারি ২০২১এ । ছাড়পত্র পাওয়ায় পরেই কেবলমাত্র কোনো ওষুধ বা ভ্যাক্সিনের উৎপাদন শুরু করার কথা। এক্ষেত্রে সেই নৈতিকতা কিন্তু লঙ্ঘিত হয়েছে।
৫) ভ্যাকসিনটির গায়ে ডেট অফ এক্সপায়ারি লেখা থাকলেও তা খুবই স্বল্প মেয়াদি। ভ্যাক্সিন বা ওষুধের ক্ষেত্রে মেয়াদ এত স্বল্প হয় না। ফলে এর কার্যকারিতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। তাছাড়া এই ভ্যাক্সিনটি যেখানে এপ্রিল মাসেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে, সেখানে এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই কোটি কোটি মানুষকে কোভিড এপ্রোপ্রিয়েট বিহেভিয়ার মেনে ভ্যাক্সিনেশন করার মত পরিকাঠামো এদেশে নেই। তড়িঘড়ি করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
৬) ভ্যাক্সিন ভায়ালের গায়ে ভি ভি এম বা ভ্যাকসিন ভায়াল মনিটর নেই। একমাত্র যার সাহায্য নিয়ে বোঝা যেতো তাপের প্রভাবে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নষ্ট হয়েছে কিনা। ফলে সারা দেশ জুড়ে যখন ভ্যাকসিনটি সরবরাহ করা হবে - এমন বহু জায়গাতেই কিন্তু কোল্ড চেইন সিস্টেম (একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সুরক্ষিত রাখা) যেখানে হয়তো ঠিকঠাক নেই। সেখানে তাপমাত্রার প্রভাবে কার্যক্ষমতা আছে না নষ্ট হয়েছে তা বোঝার কোনো উপায় নেই।
৭) ভ্যাকসিনেশনের ফলে মানুষের মধ্যে একটা আত্মসন্তুষ্টির ভাব আসবে।একদিকে কম এফিকেসী সম্পন্ন ভ্যাকসিন যেখানে সুরক্ষা দিতে পারবে না, আবার সেখানে কোভিড এপ্রোপিয়েট বিহেভিয়ারও মানা হবে না। ফলে করোনা সংক্রমণ আরো বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
৮) অধিক মুনাফার স্বার্থেই উপযুক্ত সময় দিয়ে গবেষণা না করে কর্পোরেট কোম্পানিগুলি তড়িঘড়ি ভ্যাকসিন বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে এবং ভোটের চটকদারি রাজনৈতিক স্বার্থে আমাদের সরকারগুলো মানুষের কল্যানের কথা বলতে বলতেই বিজ্ঞানের দিক থেকে, এইসব অমীমাংসিত জরুরী প্রশ্নগুলোর সমাধান না করেই ভ্যাক্সিন মানুষের শরীরে তড়িঘড়ি প্রয়োগের বন্দোবস্ত করছে বলেই আমরা মনে করি।

Post a Comment

ধন্যবাদ

Previous Post Next Post