হৃদয় আমার হারে
দ্বারক ঘোষ
ঐ আকাশটা আমার চেনা
সেতো বন্ধু আমার অনেক দিনের ।
বর্ষাভেজা আঁধার রাতে মেঘেরা যখন মাঝে মাঝে বিশ্রামে যেত
ফাঁক বুঝে আমার আকাশটা পাঠাত জ্যোৎস্নামাখা চাঁদকে ;
চাঁদটা উঁকি মেরে দেখতো আঁধার ভেঙে চলা পথিককে,
তার আদরাবৃত স্নিগ্ধ চাউনি মেলে ;
আঁধার রাতে বন্ধু আকাশটা তারাদের ছড়িয়ে দিত তার নীলাঞ্চলের মাঠে ,
মিষ্টি মিষ্টি হাসি নিয়ে তারারা মাততো খুশির খোলা হাটে ;
তারারা তাদের নরম আলো সাজিয়ে দিত আঁধার রাতের পথে ।
ঐ যে মাঠটা!
সেও আমার অনেক দিনের চেনা।
ঐ মাঠ সামাজিক দায়ভারের মুখবোজা বৃষস্কন্ধি ।
মাঠের সবুজেরা সকাল-সাঁঝে দোলা দিয়ে যায় মনোভূমে,
ঐ মাঠ আমার মনের মাঠের আত্মিকতায় বন্দী ;
সোনা ঝরা হেমন্তের সোনালী আলিঙ্গন
বসন্তের বাতাসে গা ভাসিয়ে পলাশ-শিমুলের হাসি হাসি মুখ,
সে তো আমার হৃদয় চুরির অভিনব এক ফন্দি ।
আর ওই যে বনানী ঘেরা পল্লীপাড়—
সে তো আমার বুকের পাড়ায় জেগে থাকা প্রাণোচ্ছল প্রতিবেশী ।
সে কি আজকের চেনা !
ওই পল্লীর পাড়ে বোঝা হয়ে আছে
আমার লক্ষ ঋণের দেনা ।
বাউলের সুরে সুরে মোহ-আচ্ছন্ন মাটি,
হামাগুড়ি দিতে শিখেছিলাম তার ধূলিপাড়ে ;
হৃদয়টা বুঝি তখনই হারিয়ে গেছে ওই মাটিতে
বাউল গানের সুর তোলা ঐ একতারাটির তারে।
ওইযে গাঁয়ের মানুষগুলো—
সেতো নয় শুধু অনেক দিনের চেনা !
শ্রীহীন চোখমুখ সহজ-সরল বুক
ওরা না পাওয়ার মাঝে হারিয়ে ।
আমাদের মিথ্যা অহংকারের নির্ভর জীবন
ওদের শ্রমের স্বীকৃতি যায় মাড়িয়ে—
ওরা হারিয়ে থাকে আপনতার আড়ালে ।
ওরা আমার আপনজন,
ওরা নয় শুধু অনেক দিনের চেনা !
জেনো, আমার এই হৃদয়খানি
ওদের ভালোবাসা দিয়ে কেনা।
প্রাণঘেরা ঐ পল্লীর পাড়,
ঐ নীল ছড়ানো আকাশ
বলাকাদের পাখা মেলা সারে সারে—
আমার খোলা মনের জানালা দিয়ে ফিরে আসে ওরা— ওরা ফিরে আসে বারেবারে ;
ঐখানে ঐ নীল আকাশের পাড়ে,হৃদয় আমার হারে।