সর্বগ্ৰাসী কর্পোরেট
দ্বারক ঘোষ
ক্ষমতা চাই—
আরও আরও আরও ক্ষমতা চাই আমার ।
আকাশ বাতাস বন জঙ্গল পাহাড় পর্বত সব—
সব নিংড়ে নিতে চাই আমি ।
আমি নতুন যুগের দাস-মালিক
আধুনিক নামে কর্পোরেট ,
পৃথিবীটাকে আমি রাখতে চাই পদাতলে ;
এই পৃথিবী আমার বশ্যের গঢ়—
আমিই এই পৃথিবীর অধীশ্বর।
আমি দেশে দেশে যুদ্ধ বাধাই
নির্বিচারে হত্যালীলা চালাই ।
বোমা বর্ষণে বর্ষণে গুঁড়িয়ে দিই যা কিছু সব—
হাসপাতাল স্কুল-কলেজ বাদ রাখিনা কিছু ;
কুছ পরোয়া নেহি ।
যুদ্ধনীতি! তোয়াক্কা করি না—
সে তো আমারই সাজানো গল্প ;
সে তো আমার আর এক চতুরতা।
মানবিকতা ! নৈতিকতা !
ওগুলোর সাথে আমার ভীষণ রকম বৈরিতা।
আমার কর্মসাধনে রয়েছে আমার পোষ্যরা ,
মহান(!)গণতন্ত্রের গলিপথের পাহারাদার ওরা—
হাজার কোটি মাস মাইনের পোষ্য ,
প্রভুর সাথে প্রবঞ্চনা করে না কোনদিন ;
সোনার শিকলে বাঁধা—
গৃহপালিত সারমেয়র ন্যায় ভীষণরকম বশ্য ।
কি দিইনি ওদের !
বৈভব দিয়েছি, বিলাসিতা দিয়েছি
সত্য আড়াল করতে মিথ্যা পরিবেশনের মিডিয়া দিয়েছি ,
প্রশাসন!
তার মেরুদন্ডখানা দুমড়ে-মুচড়ে মেরুদন্ডহীন করে দিয়েছি ;
দৌড় করিয়েছি পদলেহনের প্রতিযোগিতায় ।
আইনের চোখে ধুলো দিয়েছি
চোখে পরিয়ে দিয়েছি ঠুলি।
একই সুরে গলা সাধবার জন্য শিয়য়ালদের দিয়েছি
গণতন্ত্রের পীঠস্থান নামে একটি সভাকক্ষ ;
গণ সর্বনাশের সুর সৃষ্টিতে আমার পোষ্যরা দারুণ— দারুণ ভাবে দক্ষ ।
পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য—
আমার সৃষ্ট 'ভোটাকাশের সন্ধ্যাতারা '!
পাঁচ বছর অন্তর তার উদয় ,
আমার পোষ্যরা তারার আলোয় আলোকিত হয়,
সমাজসেবীর সার্টিফিকেট গলায় ঝুলিয়ে দিই আমি ;
রাজপথ থেকে অলি-গলি—
আমার মহিমা প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ।
বুঝতে পারি,
পোষ্যদের ঘটেছে সত্যিকারের বোধোদয় !
ঐকান্তিক চেষ্টায় ভোটবনে ছড়িয়ে দেয় নোটফুলের গন্ধ ;
ঢল নামে ভঙ্গুর যৌবনের—
সুস্থ চিন্তাগুলো কবরে শায়িত রেখে।
মহাদেবের প্রসাদ বিতরণ চলে বিরামহীন—
সুসম্পন্ন হয় আমার কর্মসাধনা ।
পোষ্যদের জন্য সাজানো থাকে গদির স্বপ্ন—
সাজিয়ে দিই বাড়ি-গাড়ি,অর্থ-কড়ি
কিছু উহ্য চাওয়া পাওয়ার ভেট ;
বদলে আমার চাই সব—
পৃথীবিটাকে আমি নিংড়ে নিতে চাই
শিক্ষার সর্বনাশ চাই
ধীমানের ধ্বংস চাই
মনুষ্যত্বের মৃত্যু চাই
প্রেম-প্রীতির পচন চাই
প্রতিবাদের পঙ্গুত্ব চাই
সস্তার শ্রম চাই—
চাই লক্ষ-কোটি ক্ষুধার্ত পেট।
আমি পৃথিবীর ভয়ঙ্কর ভাইরাস—
বিরামহীন শোষণের সৃজক ;
আমি শয়তানের আর এক নাম—
কুৎসিত, কদাকার কুচক্রী—
সর্বগ্ৰাসী কর্পোরেট।