রামরাজ্যে ধর্ষকের মুক্তিলাভ

রামরাজ্যে ধর্ষকের মুক্তিলাভ
চন্দ্রপ্রকাশ সরকার
১৭ আগস্ট ২০২২
গুজরাটে বিলকিস বেগমের গণধর্ষণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সাজাপ্রাপ্তদের রাজ্যসরকার জেলবন্দী জীবন থেকে মুক্তি দিল।

সংঘ পরিবারের সদস্যরা নিজেরাই গুজরাটকে হিন্দুত্বের পরীক্ষাগার হিসেবে দাবি করে থাকেন। হিন্দুত্বের পরীক্ষাগার মানে রামরাজ্যের প্রস্তুতি পর্ব। প্রস্তুতি পর্বের শুরুতেই, ২০০২ সালে, সেই রাজ্যে নরহত্যা এবং নারী নির্যাতনের রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তখন ছিলেন সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।আদালতের রায়ে গুজরাট গণহত্যার রক্তের দাগ অবশ্য নিজের হাত থেকে ইতিমধ্যেই ধুয়ে ফেলেছেন মোদীজি। সেই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত দলীয় সাগরেদদের প্রতিও তিনি যথারীতি উদারহস্ত। সেই রাজ্যে ক্ষমতাসীন তাঁরই সতীর্থরা গত ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি তথা 'অমৃত মহোৎসব'-এর দিনে ৪ জন ধর্ষক ও ৭ জন প্রশ্রয়দাতাকে কারামুক্ত করে দিয়েছেন। এই ঘটনায় অনেকেই বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি তা হইনি। কাঠুয়া, উন্নাও, হাথরসের ঘটনার পরে দু'কানকাটারা যে গ্রামের ভেতর দিয়েই যাবে তাতে আর বিস্ময়ের কী আছে! কবর থেকে নারীদেহ তুলে ধর্ষণের নিদান দেওয়ার পরেও যে-দলে মুখ্যমন্ত্রী হতে বাধা থাকে না, সেই দলের পক্ষে অসাধ্য কিছুই নয়! ফলে আমি বিস্মিত হইনি। এখন আসুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঘটনাটা ঠিক কী ছিল।
২০০২ সালে পরিকল্পিত দাঙ্গার সময় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রাণভয়ে পালাচ্ছিলেন বছর বাইশের তরুণী বিলকিস বানু। সে তখন ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ঝোপের আড়াল থেকে টেনে বার করে পরিবারের তিন শিশু ও চার নারীকে নির্মমভাবে তার চোখের সামনে হত্যা করে ধর্মবীরেরা। তারপর জান্তব উল্লাসে সেই অসহায় নারীর শরীর ছিঁড়ে খায় হিংস্র পশুরা। এক সময় মৃত মনে করে নিথর দেহটি রেখে চলে যায়। কোনভাবে প্রাণে বেঁচে যান বিলকিস। ২০০৪ সালে সমাজকর্মীদের সহায়তায় খুন ও ধর্ষণের মামলা শুরু হয়। আমদাবাদ আদালতে মামলা চলার সময় একের পর এক হুমকি দেওয়া হয় সাক্ষীদের। অদম্য বিলকিসের আবেদনে সাড়া দিয়ে মামলা স্থানান্তরিত হয় মুম্বাইয়ে সি বি আই আদালতে। ২০০৮ সালে আদালত ১১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তাদের মধ্যে দুজন ডাক্তার এবং পাঁচজন পুলিশ অফিসার। তথ্য-প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার কারণেই তাদের এই সাজা। বলা বাহুল্য, প্রভাবশালী রাজনীতিকদের পাল্লায় পড়েই তারা এই অপচেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অপরাধীরা বোম্বে হাইকোর্টে আপিল মামলা করলে হাইকোর্ট ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতের রায়ই বহাল রাখে। শুধু তাই নয়, নিম্ন আদালত যে সাতজনকে 'তথ্যপ্রমাণের অভাবে' মুক্তি দিয়েছিল, তাদেরও জামিন খারিজ করে দেয়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট বিলকিসকে পঞ্চাশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, চাকরি এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য গুজরাট সরকারকে নির্দেশ দেয়।
এযাবৎকাল সবাই মুখে অন্তত ধর্ষণের নিন্দা করত। গুজরাট বিধানসভার আসন্ন নির্বাচনের প্রাক্কালে ধর্ষকদের কারামুক্ত করে দিয়ে বিজেপি সরকার সারা বিশ্বের কাছে ভারতের মান-মর্যাদাকে আবারও ভূলুণ্ঠিত করল!

Post a Comment

ধন্যবাদ

Previous Post Next Post