আল কায়দার সঙ্গে হামাসের মিল অনেক। দু’জনেই রাষ্ট্রের তৈরি ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’।

    গত ৭ অক্টোবর শনিবার ভোরে হামাস ইজ়রায়েল আক্রমণ করে। পর পর রকেট এবং বোমা হামলা চলতে থাকে ইহুদি দেশটির উপর। পাল্টা প্রত্যাঘাত করে ইজ়রায়েলও। নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে হুঁশিয়ারি দেন এবং পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। সেই থেকে অনবরত যুদ্ধ চলছে। এখনও পর্যন্ত দু’পক্ষের মোট তিন হাজার মানুষের প্রাণ গিয়েছে এই যুদ্ধে।

   
অন্তর্জাল থেকে 

লক্ষ্যনীয় যে, ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনের মিল অনেক। তাঁরা দু’জনেই রাষ্ট্রের তৈরি ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’। দু’জনেই প্রাক্তন মদতদাতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। নিহতও হয়েছিলেন ‘স্রষ্টার’ নির্দেশেই।
  আল কায়দার প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান লাদেনের উত্থানের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল আমেরিকা। প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ইয়াসিনকে প্রথম পর্যায়ে মদত যুগিয়েছিল ‘শত্রু দেশ’ আমেরিকারই বন্ধুরাষ্ট্র ইজ়রায়েল। ঘটনাচক্রে, দু’টি সিদ্ধান্তই বুমেরাং হয় দু’দেশের কাছে।
   আশির দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারির বিরুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনীর প্রতিরোধে অংশ নিতে আরবের ধনকুবের পরিবারের সন্তান লাদেনকে সর্বতো ভাবে মদত দিয়েছিল আমেরিকা। সে সময়ই গাজ়া ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলের ‘তাস’ হয়ে উঠেছিলেন শেখ আহমেদ ইয়াসিন।
ইজ়রায়েলের উদ্দেশ্য ছিল, প্যালেস্তিনীয়দের মুক্তি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ইরাসের আরাফতের মোকাবিলা করতে ‘প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’-এর বিরোধী শক্তি হিসাবে একটি সংগঠন গড়ে তোলা। সেই সূত্র ধরেই ইয়াসিনের উত্থান এবং হামাসের আত্মপ্রকাশ।
   ১৯৮৭-র ১৪ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করা হামাস সংগঠনের পুরো নাম, ‘হারকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া’ অর্থাৎ ‘ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন’। প্রতীক জ়েরুসালেমের হারম আল-শরিফ মসজিদের (ইজ়রায়েলিদের কাছে পরিচিত ‘টেম্পল মাউন্ট’ নাম) গম্বুজ এবং পবিত্র তরবারি।
১৯৮৮ সালে ইয়াসিনের নেতৃত্বে হামাসের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মঞ্চ ‘পলিটিক্যাল ব্যুরো’র বৈঠকে গৃহীত হয় ‘হামাস চার্টার’। সেখানে ‘অধিকৃত আরব ভূখণ্ড’ থেকে ইজ়রায়েলি দখলদারি পুরোপুরি উৎখাতের ডাক দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে ইজ়রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্যে আমেরিকার মধ্যস্থতায় অসলো-১ চুক্তি সই করেন আরাফত। এই ঘটনায় ইজ়রায়েলি ফৌজের নিপীড়নের শিকার গাজ়ার প্যালেস্তিনীয় জনতা পিএলও-র উপর আস্থা হারায়। দ্রুত জনপ্রিয়তা বাড়ে শান্তিপ্রক্রিয়ার বিরোধী কট্টরপন্থী হামাসের।
২০০৬ সালে ১৩২ আসনের ‘প্যালেস্তাইন লেজিসলেটিভ কাউন্সিল’-এর ভোটে ৭৪টিতে জিতে গরিষ্ঠতা পায় হামাস। কিন্তু সংগঠনের প্রধান ইসমাইল হানিয়া ‘প্যালেস্তাইন জাতীয় কর্তৃপক্ষ’-এর প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হলেও ইজ়রায়েল এবং পশ্চিমি দুনিয়ার বাধায় তা সম্ভব হয়নি।
    ২০০৭ সালের মে মাসে মাত্র পাঁচ দিনের লড়াইয়ে ‘প্যালেস্তাইন জাতীয় কর্তৃপক্ষ’-এর নিরাপত্তা বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে গাজ়ার নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ পায় হামাস বাহিনী। এর পর ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্যালেস্তাইন সরকারের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে সমান্তরাল প্রশাসন চালাতে শুরু করে তারা। পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার যে নীতি, তার ব্যর্থতার একটি জ্বলন্ত নজির এই ঘটনা”, অভিমত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।

Ajoy Chakraborty লেখা

Post a Comment

ধন্যবাদ

أحدث أقدم