ভারতের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির অংশমাত্র

     ২০০৭ সালের শেষের দিকে মার্কিন অর্থনীতি মন্দার কবলে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে এক মার্কিন নিয়োগ কর্তা ৬৩,০০০ কর্মী ছাঁটাই করে, যা যুক্তরাষ্ট্রে গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ। একই বছরে ১লা অক্টোবর ব্যুরো অফ ইকনমিক অ্যানালিসিস জানায় যে সেপ্টেম্বরে আরোও অতিরিক্ত ১৫৬,০০০ জনের চাকরি ছাঁটাই হয়েছে। সেই বছরে নভেম্বরে ছাঁটাই হয় ৫৩৩,০০০ জন কর্মী। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০০৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫১ লক্ষ শ্রমিক ছাঁটাই হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০৯ সালে মার্চে বেকারত্বের হার পৌঁছায় ৮.৫%।
      
   
     ২০০৮ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর আমেরিকার চতুর্থ বৃহৎ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে।৬০ হাজার কোটি ডলার ঋণের বোঝা ঘাড়ে চাপে।তারা জানিয়ে দেয় এই ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। ব্যাঙ্ক বিমা কোম্পানীগুলি মুলত আবাসন শিল্পে বিনিয়োগ করেছিল। এই শিল্পটি বুদবুদের মতো বাড়ছিল। অল্প সময়ে, কম বিনিয়োগ করে প্রচুর মুনাফার কারবার সারা পৃথিবীতে ছেয়ে গেছে,। আবাসন শিল্পে বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে এই যুক্তরাষ্ট্র। 
   ১৯৯১ সালের গ্যাটস চুক্তি অনুযায়ী সারা পৃথিবীটাই এখন একটাই বাজার। তাই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সাথে সারা পৃথিবীর প্রতিটা দেশ জড়িত। এক কথায় বলতে গেলে বিশ্বে পুঁজিবাদী অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড মার্কিন মুলুক। সেখান থেকেই সারা বিশ্বে পুঁজির রক্ত সঞ্চালিত হয়। হৃৎপিণ্ড যেমন রক্ত সরবরাহ করবে, তেমন রক্ত ভারতে আসবে।  যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগকারীরা যেভাবে আবাসন ব্যবসায় পুঁজি ঢেলেছিল, তেমনই ভারতের বৃহৎ পুঁজির মালিকরা উৎপাদনমুখী শিল্প না করে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজির রক্তে সিঞ্চিত হয়ে আবাসন শিল্পে বিনিয়োগ করে। ২০০৮ সালেই এই দেশে আবাসন শিল্পে মন্দা চরমভাবে পরিলক্ষিত হয়। এই নিয়োমেই আজ ভারতে ৬৩ জন ব্যক্তির হাতে ভারতের মোট সম্পত্তির ৭০% জমা হয়েছে। আগামী কয়েক বছর পরে এই কয়েক জনের পকেটে ভারতের ১০০% সম্পত্তি চলে যাবে।  
  যাইহোক, ২০০৮ সালে লেম্যান ব্রাদার্স দেউলিয়া হলে ভারতের নেতা মন্ত্রীগণ কোরাস ধরে, বলে আমাদের অর্থনীতি খুব মজবুত। এখানে বিশ্বমন্দার কোন প্রভাব পড়বে না। এই দেশ যেন অন্য কোন গ্রহের দেশ।  ভারত গ্যাটস চুক্তিতে স্বাক্ষর কারী দেশ নয়। ভারতকে বাইরের দেশ কোন প্রযুক্তি আমদানী করতে হয় না!এই দেশ যেন ব্রহ্মার দেশ।
  দেশের নেতারা যাই বলুক আজ সাধারণ মানুষ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে অর্থনৈতিক মন্দা কাকে বলে। বেকারি সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে। প্রতি ১২ মিনিট অন্তর একজন বেকার আত্মহত্যা করছে। শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা দূরের কথা চালু শিল্পই বন্ধ হচ্ছে। জানিনা কোন ব্রহ্মা রক্ষা করবে।

Post a Comment

ধন্যবাদ

أحدث أقدم