যে কারণে খুন হন রাম মন্দিরের প্রধান পুরোহিত লালদাস।

      বৃটিশ শাসক ভারতের স্বাধিনতা আন্দোলনকে দুর্বল করতে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন করার লক্ষ্যে বাবরি মসজিদ বিতর্ক পরিকল্পনামাফিক প্রচার করেছিল। তাঁদের মস্তিষ্ক থেকেই প্রথম রাম-মন্দিরের কথা বের হয় এবং তাঁরা কিছুটা সফল হয়। কিছুটা সফল বললাম এই কারণে,  যদি তাঁরা সম্পুর্ণ সফল হত তাহলে ভারত স্বাধীন হতো না। আর কিছুটা সফল হয় তার প্রমাণ দেশ ভাগ। সম্পুর্ণ সফল না হওয়ার কারণ হল স্বাধীনতা আন্দোলনে চরম্পন্থীদের অনমনীয় ভুমিকা। যে আন্দোলনে জড়িয়ে ছিল আপামর খেটে খাওয়া শ্রমিক, কৃষক।  ধর্ম শ্রমজীবী, কৃষিজীবীদের বাস্তব জীবনের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয় বলেই মনে করেছিল। তাই তাঁরা একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নেতাজীর আজাদ-হিন্দ বাহিনীই  এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ যেখানে হিন্দু মুসলিম শিখ সহ প্রায় সব সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মীয় পরিছয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে বৃটিশের বিরুদ্ধে লড়েছিল। যে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা স্বাধীনতা লাভ।
   
    দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তানের মধ্যদিয়ে দেশ স্বাধীন হলেও সাম্প্রদায়িকতার চাষ ভারতীয় উপমহাদেশ চালু থাকল।  দুঃখের বিষয় পরাধীন ভারতে চতুর বৃটিশ দ্বি-জাতি তত্ত্ব খাড়া করে সাম্প্রদায়িক পরিবেশকে তেমন বিষিয়ে তুলতে না পারলেও স্বাধীন ভারতে সেই বিষ বৃক্ষের চাষ প্রত্যেক সরকার করে আসছে। এবং আজকের ভারত সম্প্রীতিহীন সাম্প্রদায়িক বৈরিতার মধ্যে দিয়ে চলেছে। যাইহোক এটা আজকের আলোচ্য বিষয় না।

 
     স্বাধীনতার পর ১৯৪৯ সালে আবার সেই বাবরি মসজিদ রাম মন্দির বিতর্ক খুঁচিয়ে তোলে। হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ সেই প্ররচোনায় পা দিতে চাইনি। ১৯৮৩ সালে কোর্ট থেকে রাম জন্মভূমি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত লালদাস বলেছিলেন, সঙ্ঘ পরিবার কেবল ভোটের স্বার্থে মেরুকরণের মাধ্যমে হিন্দু ভোটকে একত্রিত করার চেষ্টা করছে।  বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সারাবিশ্বব্যাপী রাম মন্দিরের জন্য সংগ্রহ করা হাজার হাজার লক্ষ টাকা কেবল আত্মসাৎ করছে ও নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে তা ব্যবহার করছে। ভারতবর্ষের সম্প্রীতিকে ধ্বংস করে এরা রক্তস্নাত ইতিহাস তৈরী করার চেষ্টা চালাচ্ছে।তিনি রাম জন্মভুমি মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের দ্বায়িত্ব পালন করেন ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এবং সম্প্রীতির কথা বলতেন।

        বাবরি মসজিদ ভাঙার বিরোধিতা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস মেনে নিতে পারেনি। রাম মন্দির ইস্যু বিজেপির ভোটের বাক্স ভরানোর তাস আর সেই তাস রাম জন্মভুমির প্রধান পুরোহিতে কারনেই ভেস্তে যেতে দিতে রাজি নয় বিজেপি, আরএসএস , ভিএইচপির নেতাদের। ইতিমধ্যেই সম্প্রীতির কথা বলা প্রায় চল্লিশ জন সাধু সন্তকে বিভিন্ন ভাবে খুন করতে সক্ষম হয় আরএসএস, ভিএইচপি। তাকেও বিভিন্ন সময়ে হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও তিনি হিন্দু মুসলমান একতার কথা বলা বন্ধ করেননি। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে ভন্ড বলে গেছেন।একটি ইন্টারভিউএর পরপরই ১৯৯৩ সালে তাকে সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয় গেরুয়া ঝান্ডাধারীরা।


Post a Comment

ধন্যবাদ

Previous Post Next Post