দেবতা নির্বিকার
দ্বারক ঘোষ
ট্যাওট গাঁয়ের পুরানো পাড়া
কিছু পড়শি জুড়ে,
একটু দূরে গাঁয়ের কোণে
দাস জনেদের কুঁড়ে ।
চাষের কাজে রাখাল খোঁজে
পাড়ার বাবু যায়,
আউর পালা দেবে কেডা—
দেবে যুগল ভাই !
সেই গাঁয়েতেই দেখেছিলাম
জ্যৈষ্ঠ মাসের বেলা—
ষষ্ঠীতলার গাছের ধারে
ভিড় জমেছে মেলা ;
নানান জাতি উঁচু-নিচু
মন দিয়েছে মাতি ,
মানত করে পুজো দেবে
সঙ্গে ঝি-বউ-নাতি।
বাঁধবে ধাগা ষষ্ঠী গাছে
মনের মানত করে,
সামনে দিনে চাঁদের আলো
রয় যেন তার ঘরে ।
আসে খুশি উজার দিতে
ক্ষণেক দুঃখ ভুলে,
তারি মাঝে বিষের বাঁশি
বিষাদের সুর তুলে ।
মন্ত্রপাঠে বসেন ঠাকুর
'নকড়ি' তার নাম ,
নওদা থানার 'পাটকেবাড়ি'—
ঐ গাঁয়েতেই ধাম ।
নৈবিদ্যের নানান বাহার
নানান ডালি সাজে,
পুরোহিতের মন্ত্র পাঠন
চলে সুরের ভাঁজে।
পুজো শেষে শান্তিবারি
ছড়ান ডায়েবাঁয়ে,
উঁচু জাতির বউ-ঝি-এরা
মাখেন সবে গাঁয়ে ।
দাস জনেদের বউ-বিটিরা
গাছের পিছে রয় ,
আড়ষ্টতায় জড়িয়ে থাকে—
ছোঁয়া যাবার ভয় !
'উচ্চ জাতি' পূজার শেষে
ফিরে যখন ঘরে—
দাস মেয়েরা গাছের পিছে
পূজার ডালি ধরে !
তাচ্ছিল্যের মন্ত্রপাঠে
'ষষ্ঠী' পূজা পায়,
উঁচু-নিচু বর্ণভেদে
ভগবান ভাগ যায় !
সবার সাথে পূজা দেবার
রয়না অধিকার ,
মানুষ তরে এমন বিচার—
দেবতা নির্বিকার !