নতুন আইনে শ্রমিকদের ফোঁটা ফোঁটা রক্ত নিংড়ে বের করা হবে


বর্তমান শোষণমূলক ব্যবস্থায় পুঁজিপতিদের শোষণের মাত্রা তীব্রতর করে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে একটার পর একটা জনবিরোধী আইন তারা নিয়ে আসছে আর এই আইনের দ্বারা জনগণের মঙ্গল হবে, একথা তারা উচ্চকণ্ঠে প্রচার করছেন । নতুন শ্রম আইন খসড়া নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানিগুলোকে দিনে কাজের সময় বাড়িয়ে ১২ ঘন্টা করার অধিকার দেওয়া হল। যার ফলে শ্রমিকদের মালিক সপ্তাহে তিন দিন ছুটি দেবে। শ্রমিক কে সপ্তাহে চার দিন ১২ ঘণ্টা করে অর্থাৎ ১২×৪=৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে হবে যা ছিল ৮×৬=৪৮ঘন্টা। নতুন শ্রম আইন আসার পর শ্রমিকদের বেতন কাঠামোও বদলে যাবে(বেতন কিছু বেড়ে যাবে তারা বলছেন)।

নতুন শ্রম আইনে কার লাভ ?

প্রচলিত কথা আছে “নুন খাই যার, গুন গায় তার” একটা দেশে যখন কোন রাজনৈতিক দলকে পুঁজিপতিরা হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচনে জিতিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসান। আর সেই সরকার যে আইন গুলো নিয়ে আসে সেই আইন গুলো কি বাস্তবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ শোষিত মানুষের মঙ্গলে ? নাকি হাতেগোনা দেশের কয়েকজন লক্ষ কোটির মালিক কর্পোরেটের স্বার্থে। যে ব্যবস্থায় পুঁজিপতিদের একমাত্র লক্ষ্য হল সর্বোচ্চ মুনাফা যার জন্য তারা “কি সি ভি হতত্তাক জানেকে লিয়ে তাইআর হে” যে আইন তারা তৈরি করছে সেই আইন কি করে শ্রমিকদের মঙ্গলে আসতে পারে ? যদি আসতো তাহলে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক দেশেই আজ উৎপাদন ভিত্তিক মজুরী প্রথা চালু হয়েছে। আজকে সারা বিশ্বে ৬০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৪০০ কোটি মানুষের আজ এই দুরবস্থা হতো না! আজ পৃথিবীতে প্রতি ৩০ ঘন্টা একজন করে পুঁজিপতি ৭৭০০ কোটি টাকার মালিক হচ্ছে আর অন্যদিকে ওই একই গতিতে ১০ লক্ষ মানুষ তীব্র দারিদ্র্যের অতল গহবরে তলিয়ে যাচ্ছেন।

নতুন আইনে শ্রমিকদের ফোঁটা ফোঁটা রক্ত নিংড়ে বের করা হবে

শোষণমূলক এই ব্যবস্থায় পুঁজিপতিরা সর্বোচ্চ মুনাফার উদ্দেশ্যে নতুন নতুন আইন বানিয়ে রাষ্ট্রের দ্বারা জনগণের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দেয়। নিয়ে আসে মালিকি প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা শ্রমিক শোষণের নতুন নতুন পদ্ধতি তারা নিয়ে আসছেন। এই নীতি এমন যে শিল্প প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী, বুদ্ধিমত্তা বা চৌখস কারিগরদের বেছে নেওয়া। যারা তীব্র গতিতে কাজ করতে পারে কাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও দ্রুত উৎপাদন করতে দক্ষ। হেভি কাজের ক্ষেত্রে তারা শক্ত সমর্থক লেবারকে যেমন বেছে নেবে টেকনোলজির ক্ষেত্রেও তারা ইন্টেলিজেন্ট এবং দ্রুত কাজ করতে পারে এরকম ব্যক্তিকেই তারা চয়েস করবে। এবং তাদের কাজের হিসাব আর মাস, বছর, সপ্তাহে করা হবে না ঘন্টায় তাদের কাজের হিসাব হবে। কত দ্রুত তারা সুন্দরভাবে নির্ভুলভাবে কাজ করতে যোগ্য সেই রকম ব্যক্তিকেই তারা কাজে নিয়োগ করবে। বাকি শারীরিকভাবে দুর্বল মানসিক ভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের তারা কলকারখানায় টেকনোলজিতে ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে না। এক্ষেত্রে তাদের শ্রমিকের অভাব কোন সময় হবে না বর্তমান বিশ্বে বেকারত্ব হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশে তো গর্ত ৪৫ বছরে রেকর্ড বেকারত্ব।
ধরুন একটা মাল গাড়ির সব বগিতে কয়লা বোঝাই করতে ৫০০ জন শ্রমিক লাগে । একজন পুঁজিপতি ঐ কাজ করায় ১৪০ জন অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশ শ্রমিক দিয়ে । কাজের তীব্রতা প্রচণ্ড বাড়িয়ে , মাল খালাসের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকের প্রতিদিনের কাজের মানকে ১৬ টন থেকে ৫৯ টনে অর্থাৎ প্রায় ৩.৭ গুণ বাড়িয়ে দেয় । যে কাজ করতে একজন শ্রমিক আগে ৩-৪দিন লাগাত সেই কাজ এখন তাকে একদিনে করতে হয় । তার আয় বাড়ে সামান্যই । সর্বমোট মাত্র ৬৩ শতাংশ । অন্যভাবে বিচার করলে দেখা যায় -এই বেতন পদ্ধতি চালুর ফলে শ্রমিকের বেতন বাস্তবে কমে যায় । কমে যাওয়ার ব্যাপারটা বাস্তবে বুঝতে হবে পূর্বের তুলনায় ২.৩ গুণ শ্রম দেওয়ার প্রেক্ষিতে । ১২ ঘণ্টার কাজ তিনগুণ পরিশ্রমে করিয়ে শ্রমিকের সমস্ত শক্তি নির্মমভাবে শুষে নেওয়া হবে । দৈহিক মানসিক শক্তি কে বিক্রি করা শ্রমিকের তেজ ও পেশীশক্তির প্রতিটি ফোঁটা তিনগুণ গতিতে শুষে নেওয়া হবে । ফলে একজন শ্রমিক যতদিন বেঁচে থাকত তার আগেই সে মারা যাবে । কিন্তু এতে মালিকের কী কিছু যায় আসে ? না, কারন মালিকের ফ্যাক্টরির দরজায় আরও অনেক শ্রমিক দাঁড়িয়ে আছে !

Post a Comment

ধন্যবাদ

Previous Post Next Post