NRC, NPR, CAA হল রাষ্ট্রীয় প্রজেক্ট , যে দল ক্ষমতায় আসবে এগিয়ে নিয়ে যাবে

      আলোচনাটা জনবিরোধী আইনের উপর। খুব সংক্ষেপে কয়েকটি সূত্র ধরে কিছু দিক উল্লেখ করব। আলোচনা দীর্ঘ করার কোন অভিপ্রায় নেই, আর সেই ক্ষমতাও আমার নেই। দুষ্ট লোকের ন্যায় কিছু খারাপ বিষয় উপস্থাপনা করা আরকি। যাইহোক NRC, NPR, CAA উপর বাঁকা চোখে দেখে রাষ্ট্রের খারাপগুলি প্রকাশ করা।
           ২০০৯ সালে ইউপিএ-২ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম NPR এর প্রস্তাব আনে। ২০১০ সালে NPRএর তথ্য সংগ্রহ করে। ২০১৫ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই তথ্য আপডেট করে।
২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে দুটি সরকার শাসন করেছে। কংগ্রেস পরিচালিত ইউপিএ-২ এবং বিজেপি পরিচালিত এনডিএ ।
পলাশীর সুভাস চন্দ্র ধর্না মঞ্চ 
       CAA পাশ হওয়ার পর সারা দেশ জুড়ে নির্লিপ্ত মনের জনতা জেগে উঠে রাস্তায় নেমেছে। এই আইন বাতিল করতে হবে, NPR, NRC করা চলবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। শাসক দল ও তার সমর্থকরা বলছে নাগরিকতা দিতে CAA আনা হল। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষ এর বিরোধীতা করছে। কেউ বলছে নাগরিকতা কেড়ে নেবে, কেউ বলছে ধর্মীয় মেরুকরণ হচ্ছে। কেউ বলছে বিজেপিকে সরাতে পারলে CAA, NPR, NRC রুখে যাবে। এমনকি অতীত ও বর্তমানের বড় বড় সংসদীয় পার্টি গুলিও বলছে- যারা পূর্বে জনবিরোধী রাষ্ট্রীয় প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে গেছে। সাধারণ জনতা একেক জন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে একে মূল্যায়ন করছে। সব মূল্যায়ন ঠিক হচ্ছে এমনটা না। তবে রাষ্ট্র যা করছে, আর তাকে প্রতিরোধ করতে  "আন্দোলন করে কিছু হবে না" বলা আমজনতার বিশ্লেষণ যাই বলুক দেশে NRC বিরোধী আন্দোলন চলমান, ফলাফল ধনাত্মক বা ঋণাত্মক যেকোন একটি হবে। 

         স্বাধীনতার পর  এপর্যন্ত কোন জনবিরোধী আইন বাতিল হতে দেখলাম না।  অন্ততঃ আমার মনে পড়ছে না। আইনের রুপ পরিবর্তন হয়েছে, নতুন বতলে বন্দি করে নতুন নাম করণ হয়েছে , সংস্কার করে আরো কঠোর হয়েছে  কিন্তু  বাতিল হইনি।


চেন্নাই 
  1. The Unlawful Activities (Prevention) Amendment Act, 1967[3]
  2. The Criminal Law (Amendment) Act, 1972
  3. The Delegated Legislation Provisions (Amendment) Act, 1986
  4. The Unlawful Activities (Prevention) Amendment Act, 2004
  5. The Unlawful Activities (Prevention) Amendment Act, 2008
  6. The Unlawful Activities (Prevention) Amendment Act, 2012[4]
  7. The Unlawful Activities (Prevention) Amendment Act, 2019[5] 

     উপরের এই আইন গুলি বৃটিশ ভারতের কুখ্যাত রাউলাট আইনের চেয়েও মারাত্মক। একজন নিরপরাধ ভারতীয়কে যেকোন সময় কোন কারণ না দেখিয়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠাতে পারে। দেশের অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষের হয়ে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়েছে। UAPA-1967 এর অধীনে এলগার পরিষদ কান্ডে পাঁচ জন মানবাধিকার কর্মীকে রাষ্ট্র গ্রেফতার করে মাওবাদী যোগের অভিযোগ তুলে.। সেই UAPA আইনকে ২০১২ সালে সংশোধন করে আরও শক্তিশালী আইন বানায়। আগে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ৩মাস জেলে রাখতে পারত বিনা বিচারে, এখন ৬ মাস বিনা বিচারে জেলে রাখতে পারবে। এর সবটাই এদেশের শাসক শ্রেণী একচেটিয়া পুজিপতিদের চাহিদা পুরণ করার জন্য করে এসেছে।  কেন্দ্রের এবং রাজ্যগুলির শাসকদল এর চুড়ান্ত ব্যবহার করেছে ক্ষমতায় টিকে থাকতে।  ডান, রাম, বাম কোনদল শাসন ক্ষমতায় থাকাকালীন এই   আইনগুলির সুযোগ হাত ছাড়া করেনি। তারা রাষ্ট্রীয় প্রজেক্টেই রুপায়ন করে এসেছে।  

     পুঁজিপতিদের সর্বোচ্চ মুনাফার যোগান দিতে গিয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা শূন্যে নেমে গিয়েছে। কলকারখানার উৎপাদিত পণ্য কেনার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই।  আজকের প্রযুক্তির যুগে সমস্ত ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না, উৎপাদন শক্তি অলস হয়ে পড়ে থাকছে। সমস্ত উৎপাদন শক্তি ব্যবহার করতে গেলে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাড়তি উৎপাদন হয়ে যাচ্ছে। বাজারে কেনবার লোক নেই। ফলে উৎপাদিত পণ্য গুদামজাত হয়ে যাচ্ছে।  তাই মালিক কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই লক্ষণ শুধু ভারতে দেখা যাচ্ছে এমন নয়, সারা পৃথিবীতে একই পরিস্থিতি।

       কিন্তু একচেটিয়া পুঁজির মালিকদের মুনাফা চাই। আজকের দিনে কারখানায় পুঁজি বিনিয়োগ করে মুনাফার নিশ্চয়তা নেই। জনকল্যানকামী রাষ্ট্র রেল, বিমান, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলি থেকে দেশের সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে পরিষেবা দিতে বাধ্য। সরকার পরিষেবা না দিলেও চিকিৎসার মত জরুরী পরিষেবা জনগণ ক্রয় করতে বাধ্য। তাঁর ক্রয়ক্ষমতা থাক বা না থাক। ঘটি-বাটি বিক্রি করে হলেও পরিষেবা নিতে নেবে।  কর্পোরেট হাউস দেখতে পাচ্ছে এই রকম নিশ্চিত ক্ষেত্রগুলি সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুনাফার এই ক্ষেত্রগুলি সরকারের হাতে থাকলে  একচেটিয়া শিল্পপতিদের স্বার্থ চরিতার্থ হবে না।

     তাই একচেটিয়া কর্পোরেট হাউস এই সরকারী পরিষেবা ক্ষেত্রগুলি বেসরকারীকরণ করানোর জন্য  ১৯৯১ তৎকালীন নরসীমা রাও পরিচালিত কংগ্রেস সরকারের অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে দিয়ে GATS চুক্তি করায়। যেখানে ১৬৩ টি পরিষেবা যেগুলি সরকার প্রায় বিনামূল্যে সাধারণ মানুষকে দিতে তার সবগুলিকে বেসরকারীকরণ করতে হবে। জনকল্যাণ খাতে সরকার আর ব্যয় করতে পারবে না।  GATS চুক্তির পর কংগ্রেস ছাড়াও অনেক রঙের সরকার এসেছে,  তারা সকলেই রাষ্ট্রী প্রকল্প হিসাবেই সেই চুক্তি রুপায়ণ করে চলেছে। 

       তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের হাতে এখনও যেসব সম্পদ ও সম্পত্তি আছে  দ্রুতগতিতে আদানী, আম্বানীদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এদিকে বাঁধা হিসাবে দাঁড়াচ্ছে দেশের ভয়াবহ বেকার সমস্যা। বেকার বাহিনী দুটি হাতে কাজ চাই। পরিষেবা ক্ষেত্রগুলি বিক্রি করে দিলে বেকার বাহিনীকে সরকার কাজ কোথায় দেবে ? সংবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন বেসরকারীকরণ বাধাপ্রাপ্ত হবে। বেসরকারীকরণ বাধাহীন, মসৃণভাবে করতে গেলে জনতার দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে হবে। বাবরি মসজিদ, ৩৭০ ধারা, ধর্মীয় বিভেদ, আঞ্চলিকতা ইত্যাদি প্রয়োগ করে জনগণকে ঝাঁকুনিতে রেখে দাও। পুঁজির সেবাদাস সরকারগুলি জনগণকে ঝাঁকুনিতে রেখে বেসরকারীকরণ চুপিসাড়ে করেচলেছে। এই কাজগুলি করতে অন্যান্য দলগুলির চেয়ে বিজেপি খুব সহজে করতে পারছে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি যুক্ত করে।  সাথে RSS এর গর্ভজাত বিজেপি তাঁদের ঘোষিত এজেন্ডা হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর কর্মসুচী রুপায়ণ  করে চলেছে।
 
    হিন্দুরা বিপদে আছে, মন্দির-মসজিদ, ৩৭০ ধারা বিলোপ, পাকিস্তান, কাশ্মীর ইস্যুগুলির কার্যকারিতা কমে যাওয়ায়  আরও নতুন ইস্যু দরকার যাতে একসাথে সারা দেশের জনতার দৃষ্টি ঘোরানো যায়। তাতে জাতীয় সম্পদ বাধাহীনভাবে সহজে আদানী, আম্বানীদের হাতে তুলে দেওয়া যায়। আর সেই ইস্যুটি হল CAA, NPR, NRC । আসামে প্রয়োগ করে তারা দারুণ ফল পেয়েছে। এবার সারা ভারতেই প্রয়োগ করতে চাই।
 
     আসামে NRC চালু করেছিল কংগ্রেস আর কংগ্রেসের নেওয়া প্রকল্প শেষ করল বিজেপি। সারা ভারতে NRC লাগু হলে বিজেপি শাসন ক্ষমতা হারালে নতুন করে যেদল ক্ষমতায় আসবে, সেই দলকে এই CAA,NPR, NRC এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটাই পুঁজিপতি শ্রেণী নিয়ন্ত্রিত ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রকল্প। এটা সাধারণ মানুষ, আন্দোলনকারীদের মাথায় রাখতে হবে।  

Post a Comment

ধন্যবাদ

أحدث أقدم